পটুয়াখালী প্রতিনিধি: আজ ভয়াল ১৫ নভেম্বর। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতেই প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাত হানে উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতে। সেদিনের সেই ঘূর্ণিঝড়ে সরকারি হিসাব মতে ৪৬৬ জন প্রাণ হারান। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফসলি জমি, লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় উপকূলীয় জনপদ। তবে এই জলোচ্ছ্বাস মোকাবেলার পর উপকূলের মানুষ এখন অনেকটাই সচেতন। কমেছে দুর্যোগকালীন মৃত্যুহারও।
জানা গেছে, ২০০৭ সালের সুপার সাইক্লোন ঘূর্ণিঝড় সিডরে নিখোঁজ হয় প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ। এছাড়া সেসময় আহত হয় সাড়ে আট হাজার মানুষ। যাদের মধ্যে দুই হাজার মানুষ পঙ্গু হয়েছে। বিদ্ধস্ত হয় ৫৫ হাজার ঘর-বাড়ি, দেড় হাজার মসজিদ-মন্দিরসহ ৩৫১টি স্কুল-কলেজ। নষ্ট হয়ে যায় প্রায় পাঁচ লাখ একর ফসলি জমি। মারা যায় ১৮ হাজার গবাদি পশু। এছাড়া এক হাজার ২০৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ধ্বংস হয়।
সিডরের দু’বছর পরই ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলায় ৮ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৩ সালের ১৬ মে ঘূর্ণিঝড় মহাসেনে তিন জন প্রাণ হারান। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২১ মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুতে একজনের প্রাণহানী ঘটে।
এছাড়াও ২০০৮ সালের ৩ মে নার্গিস, ২০১৪ সালের ২৮ অক্টোবর নিলোফার, ২০১৭ সালের ৩০ মে ঘূর্ণিঝড় মোরা সর্বশেষ ও ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় হলো তিতলি। ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানে ভারতের ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যে।
তবে উপকূলে একের পর এক দূর্যোগ আঘাত হানলেও আজও উপকূলবাসীর জন্য টেকসই বেড়িবাঁধ কিংবা পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ হয়নি। ফলে এখনও এখানকার মানুষ মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই বসবাস করে।
মির্জাগঞ্জের চরখালী এলাকার বাসিন্দা করিম মিয়া বলেন, সিডরের সময় এলাকায় বেড়িবাঁধ ছিলো না। তাই হালের গরু মারা গেছে। এখন পর্যন্ত গরু কিনতে পারি নাই। সিডরের ১২ বছর পরও এলাকায় কোনো বেড়িবাঁধ নেই। সরকারের কাছে দাবি, আমাদের কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই শুধু বেড়িবাঁধ দেন।
বাউফলের চন্দ্রদীপ এলাকার বাসিন্দা শামচু ফকির কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, সিডরে আমার চার মেয়েকে হারিয়েছি। এই ভয়াবহ সিডরের কথা জীবনেও ভুলতে পারব না।
পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বশির আহম্মেদ হাওলাদার জানান, দুর্যোগকালীন আবহাওয়ার বুলেটিন সকল ধরনের গণমাধ্যমের পাশাপাশি মোবাইল অপরেটরগুলো বাংলায় এসএমএসের মাধ্যমে মানুষের কাছে পাঠালে প্রাণহানী শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রফেসর একেএম আব্দুল আহাদ বিশ্বাস জানান, উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে এবং সেগুলি অভিযোজনের মাধ্যমে আমরা দুর্যোগ মোকাবেলা করতে পারি।
জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী জানান, দুর্যোগের ক্ষতি কমাতে আপদকালীন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে এখন দুর্যোগ এলেও আগের মতো আর প্রাণহানী হয় না।